
পবিত্র ঈদুল আজহা, করোনায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপন
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈলের (আ.) সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করার নির্দেশ দান করেন।
এ ঘটনার পর থেকে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন।
প্রতি বছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই কোরবানি দেয়া হয়। পাঁচ দিন ধরে চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান আরাফাত ময়দানে সমবেত হন।
এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্তও বটে। তবে এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে হজ ও ঈদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে। হজের আয়োজন হচ্ছে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে।
ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগ মানুষ পবিত্র হজব্রত পালন করতে পারছেন না। তাছাড়া দেশের বড় অংশ ভয়াবহ বন্যাকবলিত। করোনা ও বন্যা আমাদের ঈদ আনন্দকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে এবার।
কোরবানির মূল কথা হল ত্যাগ। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর মাংস বিতরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
পরিতাপের বিষয়, এদেশের অনেকের কাছে ধর্মের মতো আধ্যাত্মিক একটি বিষয়ও পরিণত হয়েছে লোক দেখানো আচারে। প্রতিযোগিতা করে মাংস খাওয়া এবং মাসের পর মাস ডিপফ্রিজে জমিয়ে রাখা আমাদের কালচারে পরিণত হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে- আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় বান্দার তাকওয়া। কাজেই কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। কোরবানির অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ।
আল্লাহতায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। আমরা তাঁর আদেশ পালন করব অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। কোরবানির মাধ্যমে আমরা ভেতরের পশুশক্তিকে যেমন হত্যা করব, তেমনি সুদৃঢ় করব মানুষে মানুষে ভালোবাসা।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অভুক্ত শীর্ণ মানুষের জন্য একবেলা বা দু’বেলা উন্নতমানের আহারের ব্যবস্থা করা যায়। বন্যাদুর্গতদের প্রতিও বাড়িয়ে দেয়া যায় সহানুভূতির হাত। কিছু পশু চাষাবাদের পশু হিসেবে বিপন্ন কৃষকদের মাঝে দান করা যায়। সব ধর্মেই দানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে।
মানবতার সেবাই তো প্রকৃত ধর্ম। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, সমাজ তথা মানুষের ভেতরের পশুশক্তিকে দমনই হচ্ছে কোরবানির মূল কথা। ঈমানদার মুসলমানরা তা-ই করেন। এ ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের পথ ধরে লাভ করা যায় আল্লাহর নৈকট্য।
এবার সবারই উচিত করোনা সতর্কতা হিসেবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করা। মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পশু কোরবানি ও কোরবানি-পরবর্তী যাবতীয় কর্মকাণ্ডে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
নগরীতে পশু কোরবানি-পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সিটি কর্পোরেশনকে বিশেষভাবে তৎপর থাকতে হবে। নগরবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারাও যেন পশু কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। রাস্তার ওপর বা যত্রতত্র কোরবানি দেয়া অনুচিত।
এতে পরিবেশ দূষিত হয়, দুর্গন্ধ ছড়ায়। ঈদের পবিত্রতা সব ক্ষেত্রেই বজায় রাখা প্রয়োজন। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে আনন্দ ও সম্প্রীতির বড় অভাব। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।