খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি জমি রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানো জরুরি

মহামারীর মধ্যেও কৃষিতে অর্জিত উৎপাদন বৃদ্ধির যে ধারা তৈরি হয়েছে, তা বজায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস কিছুটা পিছিয়ে দিলেও দেশের মানুষ যাতে খাদ্য সংকটে না ভোগে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।জনবহুল কিন্তু অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা প্রতিটি দেশেরই খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে জমির পরিমাণ কম। এ অবস্থায় কৃষিজমির পরিমাণ কমতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।অবশ্য শিল্প ও সেবা খাতের অব্যাহত উন্নতি ঘটলে এবং রফতানি বাণিজ্য চাঙ্গা থাকলে আমদানি করেও খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে জনবহুল ও স্বল্পোন্নত দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে কিছুতেই পরনির্ভরশীল করে রাখা উচিত নয়।

 

কারণ বিশ্বের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে খাদ্যপণ্যের পরিবর্তে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ বাস্তবতায় আমাদের কৃষি খাতের আরও আধুনিকায়ন দরকার। এজন্য বিনিয়োগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগানোর ওপরও জোর দিতে হবে।

 

দুঃখজনক হল, কৃষক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করলেও দামের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য সরাসরি বাজারে আনার ব্যবস্থা করা উচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

 

খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া কর্মসূচির অন্যতম হচ্ছে অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হলে ফসলি জমিকে বিকল্প ব্যবহারের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

উদ্বেগের বিষয় হল, দেশে বছরে অন্তত ২ লাখ একর কৃষিজমি বিকল্প ব্যবহারে চলে যাচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে হাওর, বিলসহ অন্যান্য জলাভূমি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেও ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই ভূমি ব্যবহার বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়, যা আমরা করি না। কৃষি খাত আমাদের বড় শক্তি। এ খাত কেবল মানুষের আহার জোগায় না, শিল্প ও রফতানি খাত বিকাশেরও বড় উৎস। কাজেই খাদ্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি কমাতে সরকার কৃষিজমি রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

;